জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

মৌসুমের প্রথম দিনেই তিন জাহাজে সেন্টমার্টিনমুখী পর্যটকদের ভিড়


নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে মৌসুমের প্রথম যাত্রা শুরু করেছে তিনটি জাহাজ। সোমবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ভোরের আলো ফুটতেই যাত্রীভর্তি জাহাজগুলো একে একে ছাড়তে শুরু করে। নতুন মৌসুমের প্রথমদিনেই প্রায় বারোশো পর্যটক সমুদ্রপথের দীর্ঘ ভ্রমণে পা বাড়ান।

ভোর থেকেই ঘাটে ভিড় করেন দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের যাত্রীরা। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্রয়কৃত টিকিট দেখিয়ে তারা জাহাজে ওঠার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতে তুলে দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব পানির বোতল, যা দ্বীপে প্লাস্টিকের বর্জ্য কমানোর সরকারি উদ্যোগের অংশ। প্রথমবার সেন্টমার্টিনে যাওয়া অরুপ হোসেনের চোখে এ আয়োজন ছিল রোমাঞ্চ আর প্রত্যাশায় ভরা। 

তিনি বলেন, প্রথমবার যাচ্ছি, তাই ভীষণ উত্তেজনা লাগছে। প্রশাসনের তৎপরতা দেখে ভালোই লাগছে, আশা করি ভ্রমণটা সুন্দর হবে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। আগামী দুই মাস-অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত-দ্বীপে রাত্রিযাপনের অনুমতি রয়েছে। যাত্রা যেন নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ থাকে, সেজন্য টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত একমাত্র অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। প্রতিটি টিকিটে থাকছে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড; এর বাইরে কোনো টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া ছয়টি জাহাজের মধ্যে তিনটি প্রথমদিন যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছে। জোয়ার-ভাটা ও নদীর নাব্যতা বিবেচনায় দৈনিক যাত্রার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং বিকেলে সেন্টমার্টিন ছেড়ে জাহাজগুলো পুনরায় কক্সবাজারে ফিরবে।

তবে দীর্ঘ সমুদ্রপথে ভ্রমণ নিয়ে উদ্বেগ আছে অনেকেরই। গত বছর থেকেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রাই এখন একমাত্র ভরসা। চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রোকসানা আলীর মতে, টেকনাফ থেকে যাত্রা সময়সাশ্রয়ী হলেও এখন পুরো পথটাই করতে হচ্ছে সমুদ্রপথে। “যাত্রা একটু কষ্টের,” বলে মন্তব্য করেন তিনি, “তবু সেন্টমার্টিনের প্রশান্তি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।”

ঘাটে প্রবেশের সময় তল্লাশি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তাদের কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাগরপথ ও দ্বীপে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে, যাতে পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।

সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গত অক্টোবরে সরকার জারি করেছে ১২ দফা নির্দেশনা। দ্বীপে রাতের বেলা সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান আয়োজন, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ-ক্রয়-বিক্রয় এবং কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া সহ সামুদ্রিক জীবের ক্ষতি এসব কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরযান বন্ধ এবং পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কড়া নজরদারির মাধ্যমে।

প্রথম যাত্রার প্রারম্ভে ঘাট পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন এবার আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ছাড়া সেন্টমার্টিনকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

গত ১ নভেম্বর থেকেই দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগ্রহ কম ছিল পর্যটকদের। নভেম্বরজুড়ে তাই কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজই সেন্টমার্টিনের দিকে যাত্রা করেনি। ডিসেম্বরের প্রথম দিন রাত্রিযাপন পুনরায় চালু হওয়ায় দ্বীপমুখী পর্যটনের নতুন মৌসুমও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।

Powered by Blogger.