মৌসুমের প্রথম দিনেই অনিয়ম: সেন্টমার্টিনগামী কেয়ারি সিন্দাবাদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে মৌসুমের প্রথম দিনেই অনিয়মের স্পষ্ট চিত্র ধরা পড়ল। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ট্রাভেল পাস ছাড়াই পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রির দায়ে ‘কেয়ারি সিন্দাবাদ’ জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সোমবার সকালে নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে যাত্রা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনজন পর্যটকের কাছ থেকে কিউআর কোডবিহীন নকল–সম্ভাব্য টিকিটের তথ্য পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রশাসনের দাবি, অনুমোদিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বাইরে টিকিট বিক্রি শুধু অনিয়মই নয়, নৌনিরাপত্তা ও পরিবেশ–ব্যবস্থাপনার বড় হুমকিও।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবেই কার্যকর হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভ্রমণের সুযোগ পেলেও অন্য সব পর্যটককে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতেই হবে। প্রথমদিন হওয়ায় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে গ্রেফতার না করে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি; তবে ভবিষ্যতে একই অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে।
নভেম্বরেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভ্রমণচাহিদা তেমন ছিল না। ডিসেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত দুই মাসের জন্য রাত্রিযাপনের অনুমতি মিলতেই জাহাজ চলাচলে নতুন গতি এসেছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের অনুমতি থাকলেও প্রথমদিন যাত্রী সংখ্যা ছিল ১১৭৪। জোয়ার-ভাটা ও নাব্যতার কারণে অনুমোদিত ছয়টির মধ্যে তিনটি জাহাজ যাত্রায় অংশ নেয়। সি ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, নৌরুটের স্বাভাবিক চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে প্রতিদিনের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বিকেলে দ্বীপ থেকে ফিরে আসবে জাহাজগুলো।
নতুন মৌসুমে পরিবেশ সুরক্ষা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সেন্টমার্টিনে যাত্রার ক্ষেত্রে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যাত্রীদের হাতে পরিবেশবান্ধব পানি–বহনযোগ্য ফ্ল্যাক্স তুলে দিচ্ছে, যাতে দ্বীপে বর্জ্যের চাপ না বাড়ে। জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসন এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং এই প্রচেষ্টায় পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সহযোগিতা অপরিহার্য। ট্যুরিস্ট পুলিশের রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদও জানান, নিরাপত্তা ও হয়রানি নিরসনে সার্বিক নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, পাশাপাশি দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণে দল নিয়োজিত রয়েছে।
মৌসুমের শুরুতেই এমন অনিয়ম ধরা পড়ায় প্রশ্ন উঠছে, পর্যটন ব্যবস্থাপনা কতটা প্রস্তুত হয়ে নতুন নিয়মাবলি চালু করেছে। তবে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও কঠোর বার্তা, পরবর্তী দিনগুলোতে নৌরুটে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কতটা কার্যকর হয় তা এখন দেখার বিষয়।
