টেকনাফের যুবলীগ লীগ নেতা মানিক এর কালো টাকা সাদা করার মেশিন

 


সংবাদ প্রতিবেদন।। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারে কক্সবাজারের অন্যতম এজেন্ট হিসেবে খ্যাত টেকনাফের যুবলীগ নেতা নুরুল মোস্তাফা মানিক ওরফে 'মানিক মিয়া' দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে কথিত থাকলেও সূত্র বলছে- তিনি টেকনাফ ছেড়ে কক্সবাজারে এসে আত্মগোপনে থেকে গত সরকারে আয় করা বিপুল পরিমাণের কালো টাকা সাদা করার হিডেন মিশিন চালিয়ে যাচ্ছেন। ইয়াবা কারবার, নারীকাণ্ড ও আদম পাচারকে আড়াল করে শহরতলীর একটি হোটেলে গোপনে একাধিক লুপ্ত আস্তানা থেকে তিনি এ সব অনৈতিক কাণ্ডকারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্রে তথ্য। তাছাড়াও এ আস্তানায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়মিত মাদক জলসা বসে বলেও তথ্য রয়েছে। এখান থেকেই ওপার হতে আসা কক্সবাজারে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মিশন লক্ষ্য করে নানামুখী কর্মকাণ্ড চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় এখনই এই মানিক মিয়াকে থামানো জরুরি বলে মনে করছেন- কক্সবাজারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা ও ফ্যাসিজম বিরোধী বিজ্ঞজন। তবে তার কোটি টাকা ইনকামের বিপরীতে নেই যথাযথ আয়কর বিবরণ- এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। 

একাধিক সূত্রের তথ্য, লিখিত অভিযোগ ও ভার্চুয়াল ডকুমেন্টস সূত্রে জানা গেছে- টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী নুরুল মোস্তাফা মানিক। এলাকায় তিনি মানিক মিয়া নামে অধিক পরিচিত। এক সময়ে দরিদ্র-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিত থাকলেও বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারে আমলে আওয়ামী পোশাকে অতিঅল্প সময়ে বিশাল টাকার মালিক বনে যান। এ যেন আলাদিনের চেরাগহেতু মুদ্রা উৎপাদনের পুরোদস্তুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে এসে বসে। গড়তে থাকে জবাব বহির্ভূত আয়ের পাহাড়। এক পর্যায়ে টাকার মেশিন বা অদৃশ্য আয়ের বিষয়ে এলাকায় অপ্রতিরুদ্ধ গুঞ্জন শুরু হলে তিনি স্থায়ীভাবে টেকনাফ ছেড়ে এসে কক্সবাজার শহরতলীতে গোপন আস্থানা গড়ে তোলেন। বেছে নেন মূল শহরের বাইরে কলাতলী সন্নিহিত পাহাড় সমৃদ্ধ এলাকা।

তথ্য রয়েছে- প্রথম দিকে এখানে ভাড়া বাসা নিয়ে সপরিবার বসবাস করতে শুরু করেন মানিক। এসময় দিনভর তার টেকনাফের আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গনে তার বিচরণ থাকলেও সন্ধ্যা নামার আগেই তিনি সবার অগোচরে ফিরতেন কক্সবাজার শহরে। এ সময় টাকার জোরে তিরি অনন্ত: দুইটি সিএনজি চালিত ট্যাক্সি কেনেন ভিন্ন নাম ও নম্বরে, এ সব গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে রাখা হয় তারই ঘনিষ্ঠ দুইজন ড্রাইভারকে।

তথ্য বলছে- মাঝবয়সি এই দুই সিএনজি ড্রাইভারই এক পর্যায়ে তার অপরাধকাণ্ডের অন্যতম সারথি হয়ে ওঠে। কিছুসময় এ অবস্থা চলার পর কক্সবাজারে তিনি নিজের একটি ক্রাইম নেটওর্য়াক গড়ে তুলেন। মানিকের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন- ব্যক্তি মানুষ হিসেবে মানিকের একটি সম্মোহনী গুণ রয়েছে- কোনো মানুষ তার সাথে প্রথম আলাপেই তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে ওঠেন, তিনি ব্যক্তিকে তার প্রতি মুগ্ধ ও বিশ্বাসপ্রতিম করে তোলার জন্য বেশ কৌশল রাখেন। তার এই কৌশলগুরু হিসেবে অনেকে টেকনাফের এমপি বদির নাম বলেন- তবে আমাদের স্বতন্ত্র অনুসন্ধান বদির সাথে তার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।

প্রাপ্ত তথ্য সন্ধান করে জানা গেছে- একসময় পারিবারিক দারিদ্রে পিড়িত নুরুল মোস্তাফা মানিক বাল্য ও কৈশোরকাল থেকে দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। যৌবনের শুরুরদিকে তার নিজেকে বিকশিত করার লোভ পেয়ে বসে, এক পর্যায়ে তার স্কুলবেলার এক বন্ধুর পরামর্শে সবদিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। যে বিবেচনা- সেই সিদ্ধান্ত- যুক্ত হয়ে পড়েন সেকালের মামুলি আওয়ামী রাজনীতির সাথে। শুরু করেন ছবি ও ফেসবুকিয় রাজনীতি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগে মিছিল -মিটিংয়ের অগ্রভাগে দেখা যেতে থাকে মানিককে। এক পর্যায়ে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন মানিক। দায়িত্ব নেন নিজ জন্মইউনিয়ন হোয়াইক্যাং ইউনিয়নে যুবলীগকে গোছানোর, ইতোমধ্যে পরিশ্রমী যুবলীগ নেতা হিসেবে সকলের নজরে আসতে সক্ষম হন। দায়িত্ব পান যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এর। এলাকায় এলাকায় চলতে থাকে তার দলীয় কর্মকাণ্ড, এলাকায় গড়ে ওঠে মোটাদাগে দলীয় পরিচয়। এ পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ আয় বাড়ানোর কর্মকাণ্ডে। তার এক সহোদর ভাই ও বোন জামাইকে মূল কারবারি ও হিসেব রক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে পুরোদমে শুরু করেন অবৈধ কর্মকাণ্ড। গড়ে তোলে টাকার পাহাড়, এ পাহাড়ের ঠ্যালায় কক্সবাজার শহরে নিজের বাড়ি-ভূমি করার পাশাপাশি শুরু করেন হোটেল ব্যবসা। ব্যবসা থেকে টানা ফ্ল্যাট এর মালিক। সর্বশেষ তথ্যে জানা যাচ্ছে- কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচে একে একে ৫০টির অধিক ফ্ল্যাটের মালিক বনে যান তিনি। এ যেন অল্পদিনে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়ার মতন ব্যাপার।

জানা গেছে- সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা ভাবে রাজনৈতিক বোল পাল্টানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়, ফলে তিনি দিনে গোপনে থাকলেও সন্ধ্যা নামলেই কলাতলীর ওয়ার্ল্ড বিচে শুরু হয় তার বিচরণ। এরই মধ্যে টেকনাফের নিজ এলাকা থেকে আসতে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। তথ্য রয়েছে- এখানে তার হোটেলে একেকদিন একেক কক্ষে বসে গোপন বৈঠক। টেকনাফে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সব আয়োজন ও সিদ্ধান্ত হয় এ সব কক্ষ থেকেই। তবে তার এসব কর্মকাণ্ডে সহায়ক শক্তি হিসেবে রয়েছেন জেলার কতিপয় পলাতক আওয়ামী নেতা।

এব্যপারে জানতে চাইলে গতকাল রাতে অভিযুক্ত নুরুল মোস্তাফা মানিক দৈনিক কক্সবাজার সংবাদকে জানান- তিনি যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এটি সঠিক, তিনি যুবলীগের যুগ্ম-সা. সম্পাদক ছিলেন বলে জানান। তবে তার বিরুদ্ধে আসা এ সব অভিযোগ সত্য নয়, এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।

এদিকে নুরুল মোস্তাফা মানিক ওরফে 'মানিক মিয়া'র এই দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড এখনই থামানো দরকার বলে মনে করেন কক্সবাজারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা ও ফ্যাসিজম বিরোধী বিজ্ঞজনগণ। তারা বলছেন- বর্তমানে বিভিন্নজনের সাথে সখ্যতা গড়ে পুরানো পাপ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি হোটেল ব্যবসার সাইনর্বোডকে টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে নিয়েছেন এই ফ্যাসিস্ট দোসর। তাঁদের অনেকে বলেছেন- প্রশাসন এ মুহূর্তে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এই এজেন্টকে না দমালে কক্সবাজারের শান্তিপ্রিয় জনতা নিজেরাই তার প্রতিহত করবে।

Powered by Blogger.