জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহাল নাজিরারটেকে ভরা মৌসুমে কর্মব্যস্ততা, সপ্তাহে উৎপাদন ১ হাজার টন


বাবলু দে:

কক্সবাজারের নাজিরারটেক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মহাল। বঙ্গোপসাগরের উপকূলঘেঁষা বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের পুরোদম কাজ। নভেম্বরের শুরুতেই এখানে নেমেছে মৌসুমের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। প্রায় ১২৫ শতক জায়গাজুড়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে হাজারো শ্রমিকের ঘাম-ঝরা পরিশ্রম। দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয় এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি, যা কক্সবাজারের অর্থনীতিতে সারা বছর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

ভোরের আলো ফুটতেই নাজিরারটেকের বাতাসে ভেসে আসে কাটামাছের শব্দ, সাগরফেরত কাঁচামাছের গন্ধ আর হইহুল্লোড়। লবণ মাখানো মাছ কেটে পরিশোধনের পর পানিতে ধুয়ে রোদে তোলা হয় চাতালে কিংবা বাঁশের উঁচু মাচায়। মাছের ধরন অনুযায়ী থেকে ১০ দিন রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি।

একসময় নোংরা পরিবেশে বালুর ওপর শুঁটকি উৎপাদন হলেও এখন দৃশ্য বদলেছে। উঁচু চাতাল, বাঁশের মাচা আর তুলনামূলক পরিষ্কার পরিবেশ শুঁটকি তৈরিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে যা স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমিয়েছে।

শ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছি। একদিনও ছুটি নেই মৌসুমে। তবে মজুরি বাড়ানোর দাবি অনেকদিন ধরেই জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা ও মৌসুম শেষে পর্যাপ্ত কাজ না থাকার বিষয়টি নিয়েও কারোর মাথাব্যাথা না থাকায় আমরা উদ্দিগ্ন হই।

 


নাজিরারটেকে তৈরি হয় ২০-২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি এর মধ্যে রয়েছে, ছুরি, চাপা, সুরমা, রূপচাঁদা, ফাইসা, লইট্ট্যা, পোয়া, কেচকি, মাইট্যা, চিংড়ি, লাক্ষাসহ নানা জাতের মাছ।
ছোট মাছ সরাসরি শুকালেও বড় মাছ কেটে তুলতে হয়।

বিশাল শুঁটকি পল্লিতে এখন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক মৌসুমী কাজে নিয়োজিত। বর্ষাকাল ছাড়া মাস জুড়েই চলে শুঁটকি উৎপাদন।

 

ব্যবসায়ীদের হিসেবে শুধু নাজিরারটেক মহালেই প্রতি সপ্তাহে তৈরি হয় প্রায় হাজার টন শুঁটকি, যার মধ্যে থাকে মাছের গুঁড়াও। মাসে উৎপাদন হয় হাজার টনের বেশি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫০০-৬০০ কোটি টাকা

ব্যবসায়ী মোঃ ফারুক বলেন, এখানকার শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়, পাশাপাশি রপ্তানি হয় বিদেশে। পরিবেশ উন্নত হলে উৎপাদন মান আরও বাড়ানো সম্ভব। মৌসুমে আমরা পর্যাপ্ত শুটকি সংগ্রহে রাখি, মৌসুম শেষ হলে সারাবছর তুলনামূলক কম বিক্রি হলেও আমরা চেষ্টা করি ভালো মানের শুটকি রাখতে।

যাতায়াত সুবিধা বাড়ার ফলে অনেক পর্যটক এখন সরাসরি শুঁটকি মহালে এসে নিজেদের পছন্দমতো শুঁটকি কিনছেন।
পর্যটকদের মতে, এখানে এসে নিজের চোখে দেখে কেনার সুযোগ থাকায় দামও কম পড়ে, মান নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যায়।


ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা এক পর্যটক জানান, ব্যাগভর্তি শুঁটকি কিনলাম। এখানকার শুটকি অর্গানিক তাই যতবারই কক্সবাজার ঘুরতে আসি যাবার সময় শুটকি কিনে নিয়ে যাই। বাজারের তুলনায় অনেক সস্তা।

শুঁটকি পল্লির বৃহৎ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা জানাননাজিরারটেকে আসার সড়কে ভাঙাচোরা অংশ থাকায় অনেক পর্যটক ফিরে যান। পাশাপাশি শুঁটকি মহালকে আধুনিকায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তারা।

নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লির সহ-সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, সড়ক উন্নয়ন স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে আরও বড় বাজার ও উৎপাদন পরিসর বাড়াতে সমস্যা হবে।

সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুদ্দিন খান বলেন, নাজিরারটেক শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় এলাকা। সরকার চাইলে এটিকে রপ্তানি জোনে রূপান্তর করা সম্ভব। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সবসময় চেষ্টা করি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শুটকি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে।


শুধু নাজিরারটেক নয়, মহেশখালীর সোনাদিয়া, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া উপকূলীয় শুঁটকি মহালেও জোরেশোরে চলছে মৌসুমের উৎপাদন।

দশক ধরে চলা এই শিল্প উপকূলীয় মানুষের জীবিকা, দেশের খাদ্যজোগান রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে টেকসই উন্নয়ন আধুনিকায়ন নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

Powered by Blogger.