জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

কক্সবাজার সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে পোল্ডার সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে সীমান্ত নিরাপত্তা শক্তিশালী করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা এবং স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পোল্ডার সংস্কার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পসহ মোট ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা একনেক চেয়ারম্যান . মোহাম্মদ ইউনূস।

সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা . ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, কক্সবাজার উপকূল দেশের অন্যতম সংবেদনশীল এলাকা। এখানে সীমান্ত নিরাপত্তা প্রাকৃতিক দুর্যোগদুটোরই ঝুঁকি একযোগে মোকাবিলা করতে হয়। পোল্ডার বা উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ায় বহু এলাকায় জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়ছে। এতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল কার্যক্রম যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনি স্থানীয় মানুষের বসতি, কৃষিজমি মৎস্যচাষও নিয়মিত হুমকির মুখে পড়ে। অবস্থায় পোল্ডার সংস্কার ব্যাপক প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “কক্সবাজারের অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। টেকনাফউখিয়া সীমান্তে মানবপাচার, মাদক চোরাচালান অবৈধ অনুপ্রবেশ দীর্ঘদিনের সমস্যা। সীমান্তের অনেক অংশই উপকূলবর্তী হওয়ায় সেখানকার টহল, নজরদারি প্রতিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থায়িত্ব বড় ভূমিকা রাখে। প্রতিরক্ষা বাঁধ দুর্বল হলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মিত চলাচল টহলে বাধার সম্মুখীন হয়। কাজেই পোল্ডার সংস্কার নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, “এই এলাকার বড় একটি অংশ রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব শিবির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা নতুন মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। পোল্ডার সংস্কার করা গেলে বড় ধরনের দুর্যোগের ক্ষতি কমে আসবে এবং পুরো অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরবে।

কক্সবাজার উপকূল এশিয়ার অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয়, নদীভাঙন এবং আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে কৃষিজমি লোনাপানিতে প্লাবিত হওয়ায় ধান, শাকসবজি অন্যান্য ফসল উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে। সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পোল্ডারগুলো আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে কৃষিজমি পুনরুদ্ধার, উপকূলীয় বনায়ন মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে বড় ধরনের সহায়তা মিলবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন।

একনেক সভায় অনুমোদিত ১৭টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হাজার ৪৫১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প ঋণ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ঢাকার মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, শ্রীকাইল ডিপ- মোবারকপুর ডিপ- অনুসন্ধান কূপ খনন, সোনাগাজীতে ২২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বাংলাদেশ সচিবালয় মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নারায়ণগঞ্জ সবুজ স্থিতিশীল নগর উন্নয়ন প্রকল্প।

একনেক বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার উপকূলে পোল্ডার সংস্কার প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণও সরাসরি উপকৃত হবে। কারণ প্রতিরক্ষা বাঁধ শক্তিশালী হলে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছোট ব্যবসা, পর্যটন এলাকার সবই নিরাপদ থাকবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন ব্যয়ও কমে যাবে। পাশাপাশি উপকূলের বহু এলাকায় ভূমি ব্যবহার আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, যা স্থানীয় কৃষক জেলেদের আয়ের পথ সুগম করবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্থিরতা বা তাড়াহুড়ো ভালো নয়; প্রয়োজন সুসমন্বিত পরিকল্পনা। পোল্ডার সংস্কার প্রকল্প শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা জলবায়ু অভিযোজন কৌশলের অংশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়িত হলে সীমান্ত উপকূলীয় এলাকায় বহুদিনের স্থায়ী সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম শিকার। ফলে এগুলোকে টেকসই করতে হলে উন্নত বাঁধ, আধুনিক প্রযুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন। কক্সবাজার পোল্ডার সংস্কার সেই দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।

Powered by Blogger.