টেকনাফ-উখিয়ায় ৬ গোপন সুড়ঙ্গপথ দিয়ে ঢুকছে ভারি অস্ত্র
অচল ৭০০ সিসিটিভি, কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের টেকনাফ
ও
উখিয়ার
পাহাড়ি
জনপদজুড়ে ৮
হাজার
একরজমিতে গড়ে
ওঠা
৩৩টি
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন
বসবাস
করছে
১৩
লাখের
বেশি
রোহিঙ্গা শরণার্থী। এ
বিশাল
জনবসতির নিরাপত্তা ও
নিয়ন্ত্রণে একসময়
কাঁটাতারের বেড়া
নির্মাণ এবং
৭০০টি
সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন
করা
হলেও
দীর্ঘদিন ধরে
সেগুলোর অধিকাংশই অচল
পড়ে
আছে।
সুযোগটি কাজে
লাগিয়ে
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে
সক্রিয়
একটি
সশস্ত্র গোষ্ঠী
কাঁটাতার কেটে
তৈরি
করেছে
অন্তত
৬টি
গোপন
সুড়ঙ্গ
পথ।
এসব
পথ
দিয়ে
রাতের
আঁধারে
মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে
বাংলাদেশে ঢুকছে
ভারি
আগ্নেয়াস্ত্র ও
মাদক।
এর
সঙ্গে
অবৈধভাবে নতুন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
এবং
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য
বিশ্লেষণ করে
জানা
গেছে,
কাঁটাতারের দুর্বল
নিরাপত্তা ও
সিসিটিভি অচল
থাকায়
ক্যাম্পের ভেতর-বাইরের অপরাধ দমনে
বড়
ধরনের
সংকট
তৈরি
হয়েছে।
মাদকচোরাচালান, অস্ত্র
বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, অপহরণ
ও
হত্যাকাণ্ড এখন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিত্যদিনের ঘটনা
হয়ে
দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে
উদ্বেগজনক তথ্য
হলো—মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে ঢুকছে
জার্মানির তৈরি
জি-থ্রি রাইফেল, রকেট
শেলসহ
ভারি
আগ্নেয়াস্ত্র, যা
সরাসরি
ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে
পৌঁছে
যাচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক
হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) জানায়,
নির্ধারিত ক্যাম্প ছাড়িয়ে
রোহিঙ্গারা এখন
টেকনাফ
ও
উখিয়ার
১১
ইউনিয়নের মধ্যে
অন্তত
১০টিতেই ছড়িয়ে
পড়েছে।
আগে
যেসব
এলাকায়
তাদের
উপস্থিতি সীমিত
ছিল,
সেখানে
এখন
শত
শত
পরিবার
স্থানীয়দের সঙ্গে
বসবাস
করছে।
ইন্টার-সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ
(আইসিজিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনও নিশ্চিত করেছে
যে
টেকনাফের প্রায়
সব
ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
শুধু
সেন্ট
মার্টিনস ছাড়া
কোনো
ইউনিয়নই এখন
রোহিঙ্গামুক্ত নয়।
২০১৭
সালের
২৫
আগস্ট
মিয়ানমারের সামরিক
জান্তা
ও
আরাকান
আর্মির
সংঘাতে
হত্যাযজ্ঞ শুরু
হলে
বাংলাদেশে পালিয়ে
আসে
৭
লাখের
বেশি
রোহিঙ্গা। সময়ের
ব্যবধানে এই
সংখ্যা
১৩
লাখ
ছাড়িয়ে
গেছে।
কূটনৈতিক উদ্যোগ
বহুবার
নেওয়া
হলেও
মিয়ানমার আজও
একজন
রোহিঙ্গাকেও ফেরত
নেয়নি।
ফলে
ক্যাম্পগুলোতে ঘনত্ব
যেমন
বাড়ছে,
তেমনি
বেড়েছে
অভ্যন্তরীণ অপরাধী
গোষ্ঠীর প্রভাবও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র
জানায়,
কাঁটাতারের বেড়া
কেটে
ফেলা
হলেও
দীর্ঘদিন ধরে
সেগুলো
মেরামত
করা
হয়নি।
ফলে
সুড়ঙ্গ
পথ
ব্যবহার করে
রোহিঙ্গারা শুধু
ক্যাম্পের বাইরে
ছড়িয়ে
পড়ছে
না,
স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে
মিলে
মাদক
ও
অস্ত্র
চোরাচালানেও জড়িয়ে
পড়ছে।
এপিবিএন-এর
তথ্য
অনুযায়ী, ক্যাম্পে স্থাপিত ৭০০টি
সিসিটিভি ক্যামেরার একটিও
কার্যকর নেই।
এতে
ক্যাম্পভিত্তিক অপরাধ
বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিও
বহুগুণ
বেড়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর
(অব.)
এমদাদুল ইসলাম
বলেন,
“সীমান্তবর্তী অঞ্চলে
মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী
সক্রিয়। ক্যাম্পে আশ্রিত
রোহিঙ্গাদের একাংশও
তাদের
সঙ্গে
সমন্বয়
করে
অপরাধে
জড়িয়ে
পড়ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান
বাড়াতে
হবে
এবং
গোয়েন্দা নজরদারি আরও
শক্তিশালী করতে
হবে।”
স্থানীয়রা জানান,
পানবাজার ক্যাম্পে কাঁটাতার কেটে
তৈরি
করা
হয়েছে
ছয়টি
গোপন
পথ।
এসব
পথ
ব্যবহার করে
মাদক
ও
অস্ত্রের চালান
আসে;
একই
পথ
দিয়ে
আবার
ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে
পড়ে।
এতে
পুরো
উখিয়া–টেকনাফ জনপদ অনিশ্চয়তা ও
আতঙ্কে
দিন
কাটাচ্ছে।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে.
কর্নেল
এস
এম
শফিকুর
রহমান
বলেন,
“সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি
সর্বাত্মক সতর্ক
রয়েছে।
অস্ত্র,
মাদক
ও
অন্যান্য চোরাচালান রোধে
গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার
করা
হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিপুল
পরিমাণ
অস্ত্র-মাদক উদ্ধার ও
শতাধিক
চোরাকারবারি গ্রেপ্তার করা
হয়েছে।”
টেকনাফ
২
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল
আশিকুর
রহমান
বলেন,
“আমরা
জিরো
টলারেন্স নীতিতে
কাজ
করছি।
প্রতিমাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ
অবৈধ
পণ্য
জব্দ
হচ্ছে।
চোরাকারবারিদের ধরতে
নিয়মিত
অভিযান
চলছে।”
সীমান্ত পরিস্থিতি আরও
উত্তপ্ত হয়ে
উঠেছে
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন,
রাখাইন
রাজ্যের বিস্তৃত অঞ্চল
এখন
আরাকান
আর্মির
নিয়ন্ত্রণে। সেখানে
প্রায়ই
গোলাগুলির ঘটনা
ঘটে।
এর
প্রভাব
সীমান্তের বাংলাদেশি জনপদেও
পড়ছে।
উখিয়া-টেকনাফের কয়েক লাখ স্থানীয় বাসিন্দা আজ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, কাঁটাতারের বেড়া দ্রুত সংস্কার, সিসিটিভি পুনরায় সচলকরণ এবং যৌথ অভিযান জোরদার না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিস্তার ঠেকাতে এখন প্রয়োজন সমন্বিত নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
