আজ মহান বিজয় দিবস
সংবাদ ডেস্ক:
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালির ইতিহাসে এটি শৌর্য, ত্যাগ ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। লাখো শহীদের রক্ত আর অগণিত মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় জাতিকে পরিচিত করেছে বীরের জাতি হিসেবে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে উদযাপনের নানা আয়োজন করা হয়েছে। ভোরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক দল ও সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে, তা রক্ষার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দিনটি উপলক্ষ্যে রাজধানীতে বিশেষ সামরিক আয়োজনও রয়েছে। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে সশস্ত্র বাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট ও ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকাবাহী স্কাইডাইভের মাধ্যমে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি পালন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোও পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। জামায়াতে ইসলামী রাজধানীতে যুব র্যালির আয়োজন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আগ্রাসনবিরোধী যাত্রার ঘোষণা দিয়েছে।
মহান বিজয় দিবস তাই শুধু একটি উৎসবের দিন নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়, ঐক্য ও ভবিষ্যৎ পথচলার প্রেরণার দিন।
