স্কুবা ডাইভিংয়ে নয়, মৃত্যুসনদে জুবিন গার্গের মৃত্যুর কারণ ভিন্ন
অনলাইন ডেস্ক:
আসামের জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার, অভিনেতা ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জুবিন গার্গ আর নেই। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের সেন্ট জন’স দ্বীপে সাতারের সময় পানিতে ডুবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুসনদে স্পষ্টভাবে ‘ডুবে যাওয়া’কেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। তবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, এটি শুধুই পানিতে ডুবে যাওয়া, কোনো অপরাধমূলক সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রাথমিক তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ভারতের হাইকমিশনকেও সরবরাহ করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ।
ঘটনার দিন জুবিন ছিলেন এক ডজনের বেশি সঙ্গীর সঙ্গে একটি ইয়টে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি প্রথমে লাইফ জ্যাকেট পরে পানিতে নামেন। কিছুক্ষণ পর জ্যাকেট খুলে আবার ঝাঁপ দেন। এরপরই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ ঘটনার পর আসাম পুলিশ তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং উৎসবের প্রধান আয়োজক শ্যামকানু মহন্তকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই দুর্ঘটনার কারণে বাতিল হয়ে যায় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে আয়োজিত নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল, যা ভারত-সিঙ্গাপুর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি ও ইন্ডিয়া-আসিয়ান ইয়ার অব ট্যুরিজম উদ্যাপনের অংশ হিসেবে পরিকল্পিত ছিল।
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া জুবিন গার্গ ছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের সংগীতজগতের প্রতীক। গায়ক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা—সবক্ষেত্রেই তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। ১৯৯২ সালে যুব মহোৎসবে পাশ্চাত্য একক পরিবেশনায় স্বর্ণপদক জয় করে আলোচনায় আসেন তিনি।
আঞ্চলিক ভাষার গানকে মূলধারায় এনে ভেঙেছিলেন ভাষার প্রাচীর। আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের সংগীত ও আঞ্চলিক সুরের মিশ্রণে তিনি তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ধারা। বলিউডেও তাঁর অবদান স্মরণীয়—‘ফিজা’, ‘কহো না… পেয়ার হ্যায়’, ‘গ্যাংস্টার’সহ একাধিক ছবিতে তাঁর কণ্ঠ শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। বিশেষ করে ‘ইয়া আলী’ গানটির মাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে তাঁর জীবন ছিল আলো-আঁধারের মিশ্রণ। নানা সময়ে তিনি বিতর্কেও জড়িয়েছেন—কখনো বক্তব্যে, কখনো রাজনৈতিক অবস্থানে। কিন্তু ভক্তদের ভালোবাসায় কখনো ভাটা পড়েনি। তাঁর সঙ্গীত, সৃষ্টিশীলতা ও মানবিকতা তাঁকে গড়ে তুলেছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের এক প্রজন্মের আবেগের প্রতীক হিসেবে।
আজও আসামের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে তাঁর গান। ভক্তদের হৃদয়ে অমলিন থেকে গেছেন জুবিন গার্গ—একজন শিল্পী, এক আবেগের নাম।