উখিয়ার সংবাদ
সংবাদ প্রতিবেদন।। কক্সবাজারের উখিয়ায় বনবিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন এনজিওর স্থাপনা।
গণমাধ্যমে বেদখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঠনক নড়লে বনভূমিতে বে-আইনিভাবে স্থাপনা নির্মাণ এবং সেগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ তুলে ছয় এনজিওর বিরুদ্ধে নোটিশ দেয় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ এর উখিয়া রেঞ্জ। এসব স্থাপনা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে উখিয়া সদর বিট কর্মকর্তা ইমদাদুল হাসানের স্বাক্ষরে এই নোটিশ প্রদান করা হয়। অভিযুক্ত এনজিওগুলোকে ছয় কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে হবে, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। নোটিশপ্রাপ্ত এনজিওগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রাক, মাইশা এন্টারপ্রাইজ, জনসেবা কেন্দ্র, ডাব্লিউএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি), আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) এবং ইউএনসিআর (জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা)। এরা উখিয়ার বিভিন্ন সংরক্ষিত বনভূমির এলাকায় বেআইনি স্থাপনা গড়ে তুলে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই ধরনের কার্যক্রম ১৯২৭ সালের বন আইন, যা ২০০০ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ২৬ (১ক) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নোটিশ প্রাপ্তির পর ব্রাক ও মাইশা এন্টারপ্রাইজ জবাব দিলেও বনবিভাগের উখিয়া সদর বিট কর্মকর্তা ইমদাদুল হাসান জানিয়েছেন, তাদের জবাবের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার মধুরছড়ায় অবস্থিত একটি বনভূমির জায়গা মাসিক ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ডাব্লিউএফপিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ কে এম আজাদ নামের একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, বনবিভাগের নোটিশগুলো মূলত জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেন, সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা দিন দিন অবৈধভাবে প্রভাবশালী মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে, যা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। বনভূমি রক্ষা এবং দ্রুত এই জায়গাগুলো উদ্ধার করার জন্য বনবিভাগকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, বনবিভাগকে ধন্যবাদ, তারা এই বিষয়ে নোটিশ দিয়েছে। আশা করি, দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বেআইনি দখল প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের সময় এনজিওগুলো কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল, তা তার জানা নেই। তবে সাম্প্রতিককালে তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি সরাসরি অবগত নই। তবে বনবিভাগ নোটিশ দিলে, যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উখিয়ার সংরক্ষিত বনভূমিতে বেআইনি স্থাপনা গড়ে তোলা এবং পরিবেশের ক্ষতির বিরুদ্ধে বনবিভাগের নোটিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে, যাতে বনভূমির সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বেআইনি দখল প্রতিরোধ করা যায়।