জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

সোনাদিয়ায় ঝাউবন উজাড় করে ‘মাহাবুব সিন্ডিকেটে’র অবৈধ কটেজ সাম্রাজ্য

উপকূলের পরিবেশ ব্যাপক হুমকিতে



নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহেশখালীর বিচ্ছিন্ন ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দ্বীপ সোনাদিয়ায় সংরক্ষিত ঝাউবন উজাড় করে অবৈধ কটেজ নির্মাণের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় রাজশাহীর মাহাবুব উর রহমানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বনের প্রায় দুই একর এলাকা দখল করে ‘ক্যাম্প ডি সোনাদিয়া’ নামে তিনতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক রিসোর্ট পরিচালনা করছে।

সংরক্ষিত বনভূমি দখল ও গাছ নিধন 

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে সোনাদিয়ার গভীর ঝাউবন কেটে কটেজ, ওয়াশরুমসহ স্থাপনা নির্মাণ করছে চক্রটি। কটেজের মুল কাঠামো, টংঘর, অতিথিবাস ও তিনতলা ভবনের বড় অংশই তৈরি করা হয়েছে ঝাউগাছ কেটে সংগৃহীত কাঠ দিয়ে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই ব্যাপকভাবে গাছ কেটে দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্য অপরাধের প্রমাণ 

আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, বন ধ্বংসের এসব কর্মকাণ্ড গোপন না করে উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করা হচ্ছে। ‘ক্যাম্প ডি সোনাদিয়া’ ফেসবুক পেজ এবং মাহাবুব উর রহমানের নিজস্ব আইডিতে দেখা যায়, ঝাউগাছ কেটে কটেজ তৈরির দৃশ্য, গাছের ডাল থেকে দোলনা বানানো, এমনকি রাতে ক্যাম্প ফায়ারে ঝাউগাছ পোড়ানোর ভিডিও ও ছবি। পেজে ব্যবস্থাপকের তালিকায় সরাসরি মাহাবুব উর রহমানের নাম উল্লেখ রয়েছে। 

পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা 

সোনাদিয়ার ঝাউবন উপকূলীয় এলাকার জন্য প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, জলোচ্ছ্বাসোত্তর জলোচ্ছ্বাস ও নোনাজলের ক্ষতি থেকে উপকূলীয় বসতি রক্ষায় এই ঝাউবনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পর্যটনের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয়দের দাবি, সিন্ডিকেটটি ইতোমধ্যে বনের আরও গভীরে নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত মাহাবুব উর রহমানের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে সচেতন হয়ে চক্রটি নতুন করে ‘আইনগত কৌশল’ সাজানোর চেষ্টা করছে। 

প্রশাসনের কঠোর অবস্থান সমগ্র বিষয়টি মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনা হলে ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যহ্ কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “সংরক্ষিত ঝাউবন কেটে অবৈধভাবে নির্মিত সব কটেজ অতি দ্রুত ভেঙে দেওয়া হবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশ কর্মীরা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও দ্রুত অভিযান না হলে সোনাদিয়ার অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।


Powered by Blogger.