১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে নিয়মিত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে থাকছে রাত্রিযাপনের সুযোগ
সংবাদ ডেস্ক:
আগামীকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে নিয়মিত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। সরকারি ১২ নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার শর্তে পর্যটকরা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটিতে রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন। এর আগে ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাহাজগুলো চলাচল শুরু করেনি। এবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে চারটি জাহাজ যাত্রার অনুমতি পেয়েছে, যা প্রতিদিন দুই হাজার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
পর্যটকদের অনলাইনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড বাধ্যতামূলক থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রথম দিনের যাত্রার জন্য তিনটি জাহাজের প্রায় ১২শ টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, মৌসুমের প্রথম যাত্রার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটকদের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর মতে, আগামী মৌসুম থেকে অন্তত চার মাস যদি রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আরও উপকৃত হবেন।
দীর্ঘদিন পর আবার পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে দ্বীপজুড়ে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় দোকানি, হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ দ্বীপবাসীর মাঝেও ফিরে এসেছে আশা। সেন্টমার্টিনের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, পর্যটন ব্যবসাই দ্বীপবাসীর জীবিকার অন্যতম অবলম্বন। নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও তারা পর্যটকদের আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি রাখতে চান না।
এদিকে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারি ১২ নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভ্রমণের সময়সূচি, দ্বীপে অবস্থানের সময়, প্রতিদিনের পর্যটক সংখ্যা—সবকিছুই এবার আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ বা বিক্রি, কাছিম, পাখি, শামুক-ঝিনুক বা রাজকাঁকড়ার ক্ষতি হয় এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরচালিত যানবাহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে নিজস্ব পানি ফ্লাস্ক বহনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, সেন্টমার্টিন দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সরকারের নির্দেশনাগুলো মেনে চলা সবার দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এবার নিয়ম মেনে ভ্রমণ করবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
সব মিলিয়ে শীতের নতুন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে পর্যটন কার্যক্রমে আবারও প্রাণ ফিরে আসার আশা করছে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
