জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

আরাকান আর্মির হাতে বন্দি ১৮২ বাংলাদেশি জেলে, নতুন করে আরও ১২ জনকে ধরে নেওয়ার অভিযোগ


সংবাদ ডেস্ক:

মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে বর্তমানে ১৮২ জন বাংলাদেশি জেলে আটক রয়েছে বলে জানিয়েছে টেকনাফের স্থানীয় বোট মালিকরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সেন্টমার্টিনের সাগর এলাকা থেকে আরও ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮২ জনে। এর মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ৩০ জন জেলে রয়েছেন।

সরেজমিনে সেন্টমার্টিনে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ জেলেদের পরিবারে চলছে চরম কান্না ও শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার ধরে নিয়ে যাওয়া জেলে ওসমানের মা মোস্তফা খাতুন অঝোরে কাঁদছেন। তিনি বলেন, “ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। ছেলের দুঃশ্চিন্তা তো আছেই, ঘরে আর কোনো উপার্জনকারী নেই—এখন কীভাবে চলবো?”

ওসমানের সঙ্গে আটক হওয়া আবু তাহেরের পরিবারের অবস্থাও একই রকম। তাহেরের ছেলে শাহীন বলেন, “কিছুদিন আগে মা মারা গেছেন। এবার বাবাকে ধরে নিয়ে গেলো আরাকান আর্মি। এখন আমি পুরোপুরি দিশেহারা।”

মোট ১২টি পরিবারে এখন একই শোকের সুর—যাদের স্বজনদের ২৭ নভেম্বর সকালে সাগর থেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।

ধরে নিয়ে যাওয়া বোটের মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, ইঞ্জিন বিকল হয়ে তাদের বোট সাগরে ভাসছিল। সেই সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা এসে ছয় মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে যায়। পাশাপাশি আরেকটি বোট থেকেও আরও ছয়জনকে আটক করা হয়।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, “এ ধরনের ঘটনা অতীতে ছিল না। আরাকান আর্মি রাখাইনে অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই এই উৎপাত শুরু হয়েছে। দ্বীপের মানুষ পর্যটন ও মাছ ধরেই জীবন চালায়। এখন পর্যটন বন্ধ, সাগরে যেতে ভয়—মানুষ যাবে কোথায়?”

আরাকান গ্লোবাল নেটওয়ার্ক নামের ওয়েবসাইটে আরাকান আর্মির বরাতে জানানো হয়েছে, জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশি জেলেদের আটক করা হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রে অসত্য বা প্রমাণহীন হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো আটক জেলেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।

মানবাধিকার কর্মী অর্পণ বড়ুয়া বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ইনোসেন্ট প্যাসেজ ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আরাকান আর্মি রাখাইনের কিছু এলাকা দখলে নেওয়ার পর এ নিয়ম তারা মানছে না।”

আটক জেলেদের পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের জরুরি উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছে।

Powered by Blogger.