হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আহত ছাত্রের সেবায় শাপলাপুরের প্রধান শিক্ষক হান্নান
হৃদয় দে, কক্সবাজার
একজন শিক্ষক
যখন
শিক্ষার্থীর জীবনে
অভিভাবকের ভূমিকায় দাঁড়ান,
তখন
সেই
সম্পর্ক আর
শুধু
পাঠদানের মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকে
না।
কক্সবাজার সদর
হাসপাতালের ঠাণ্ডা
মেঝেতে
শুয়ে
থাকা
মানুষটির নাম
এম আব্দুল হান্নান, মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়া মডেল
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান
শিক্ষক। নিজের
ছাত্রকে বাঁচাতে, সাহস
দিতে,
একাকিত্ব দূর
করতে
তিনি
যে
দৃশ্যটি সৃষ্টি
করেছেন
তা
মানবিকতার এক
অনন্য
উদাহরণ।
গত শুক্রবার শাপলাপুরের কায়দাবাদ বাজারে
বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে
সৃষ্ট
আগুনে
গুরুতর
দগ্ধ
হয়
নবম
শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মুজাহিদ। শরীরের
বিভিন্ন স্থানে
গভীর
ক্ষত
তৈরি
হওয়ায়
পরিস্থিতি দ্রুতই
জটিল
হয়ে
ওঠে।
খবর
পেয়ে
শিক্ষক
হান্নান ছুটে
যান
ঘটনাস্থলে এবং
দ্রুত
ছাত্রকে নিয়ে
যান
কক্সবাজার সদর
হাসপাতালে।
হাসপাতালের ব্যস্ত
পরিবেশে মুজাহিদ ছিল
আতঙ্কিত। পাশে
কোনো
ঘনিষ্ঠ
স্বজন
তখনো
এসে
পৌঁছায়নি। ঠিক
সেই
সময়
শিক্ষক
হান্নান পুরো
চিকিৎসাপ্রক্রিয়া একাই
সামাল
দেন।
ডাক্তার দেখানো,
ড্রেসিং, ওষুধ
সংগ্রহ,
বিভিন্ন টেস্ট
করানো, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন মুজাহিদের ছায়া।
রাত গভীর
হলে
হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা
সংকুলান না
হওয়ায়
তিনি
মেঝেতে শুয়েই রাত কাটান। ক্লান্তি, অবসাদ,
শারীরিক কষ্ট কিছুই তাকে থামাতে
পারেনি। উপস্থিত রোগী
ও
স্বজনরা দৃশ্যটি দেখে
অভিভূত
হন।
প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়তো পরিবারের সদস্য। পরে জানতে পারলাম তিনি শিশুটির প্রধান শিক্ষক। এমন আন্তরিকতা আজকাল কজনের মধ্যে দেখা যায়?”
পরদিন চিকিৎসকের পরামর্শে মুজাহিদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে স্থানান্তর করা
হলে
শিক্ষক
হান্নান নিজেই
অ্যাম্বুলেন্সে করে
তাকে
নিয়ে
যান।
দীর্ঘ
সড়কপথে
ছাত্রকে বারবার
সান্ত্বনা দেন,
মনোবল
দেন,
যাতে
সে
মানসিকভাবে ভেঙে
না
পড়ে।
চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর
ভর্তি
প্রক্রিয়া থেকে
শুরু
করে
বেড
পাওয়া
পর্যন্ত প্রতিটি কাজে
তিনি
স্বজনের মতো
এগিয়ে
যান।
এম আব্দুল
হান্নান শুধু
একজন
শিক্ষক
নন;
তিনি
এলাকার
মানুষের কাছে
নির্ভরতার প্রতীক।
দুই
যুগেরও
বেশি
সময়
শিক্ষা
সেবায়
জড়িত
থেকে
২০১৮
সালে
তিনি
নিজ
উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন
বারিয়াপাড়া মডেল একাডেমি। পাহাড়ি-দুর্গম
এলাকায়
মানসম্মত শিক্ষা
পৌঁছে
দেওয়ার
লক্ষ্যেই তার
এই
উদ্যোগ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চরিত্র
গঠন,
নৈতিকতা, মানবিকতা শেখাতে
অবিরত
কাজ
করে
আসছেন
তিনি।
বিদ্যালয়ের এক
শিক্ষক
বলেন,
প্রধান শিক্ষক হান্নান স্যার আমাদের কাছে শুধু নেতৃত্ব নয়, একটি অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন শিক্ষকতা মানে শুধু বই শেখানো নয়; মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে
পড়ার
পর
অসংখ্য
মানুষ
প্রশংসা করছেন।
অনেকেই
লিখেছেন, এমন শিক্ষক থাকলে একটি জাতিকে বদলাতে সময় লাগে না।
দগ্ধ শিক্ষার্থী মুজাহিদ এখনো
চিকিৎসাধীন। তার
শারীরিক অবস্থা
আগের
তুলনায়
উন্নতির দিকে
থাকলেও
পুরোপুরি সুস্থ
হতে
সময়
লাগবে।
তার
পরিবার,
সহপাঠী
ও
স্থানীয়রা সবার
কাছে
দোয়া
চেয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক
হান্নান বলেন,
শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানসম। মুজাহিদকে একা রেখে আসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
মানবিকতার যে
দৃষ্টান্ত তিনি
স্থাপন
করেছেন,
তা
শুধু
কক্সবাজার নয়,
পুরো
দেশের
মানুষের হৃদয়ে
জায়গা
করে
নিয়েছে।
