গোল্ডেন ও স্মার্ট থাই স্পায় দেহব্যবসা–মাদক–ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ
কক্সবাজারে অনিয়ন্ত্রিত স্পা সেন্টার নিয়ে চরম উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
কক্সবাজারের হোটেল–মোটেল জোনে অবস্থিত আলোচিত গোল্ডেন থাই ও স্মার্ট থাইসহ বেশ কয়েকটি স্পা সেন্টারের বিরুদ্ধে দেহব্যবসা, মাদকসেবন বিক্রি এবং গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তারা বলছেন, বাহারি সাজে সজ্জিত এই স্পাগুলোর ভেতরে বৈধ বডি মেসেজের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই অসামাজিক কার্যক্রম ও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, কয়েকটি স্পায় বিশেষভাবে তৈরি করা গোপন কক্ষে গ্রাহকদের জন্য রাখা হয় ইয়াবা, আইসসহ বিভিন্ন মাদক। সেখানে প্যাকেজভিত্তিক ‘মাদক বিশেষ সেবা’ চালানোর অভিযোগও রয়েছে। সিসিটিভির কঠোর নজরদারিতে নিরাপত্তাকর্মীরা বাইরে অবস্থান করে।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অনেক স্পাই মাদকবিক্রেতাদের অর্থায়নে চলে। মেসেজ রুম ব্যবহার হয় মাদকসেবনের নিরাপদ জায়গা হিসেবে।
অসহায় নারীদের শোষণ, বেতনহীন শ্রম : স্পাগুলোতে কর্মরত নারী থেরাপিস্টদের বড় অংশই স্বামী পরিত্যক্তা বা দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। অভিযোগ রয়েছে—এদের অনেককে নিয়মিত বেতন না দিয়ে টিপসনির্ভর করে রাখা হয়। অর্থনৈতিক অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
এক নারী কর্মী জানান, বেতন ঠিকমতো পাই না। না বললে জোর করে রুমে পাঠায়।
গোপন ভিডিও ধরে ব্ল্যাকমেইল : সবচেয়ে ভয়ের বিষয় স্পার গোপন রুমে অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভিডিও করে পরবর্তীতে গ্রাহক ও নারী কর্মীদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়। কেউ চাকরি ছাড়তে চাইলে দেখানো হয় ওই ভিডিও। এতে আতঙ্কে অনেকেই নীরব থাকেন।
এক তরুণী বলেন, চাকরি ছাড়তে চাইলেই বলে ভিডিও আছে। ভয় দেখায়।
পর্যটকরাও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। ব্ল্যাকমেইলের ভয়েই অনেকেই অভিযোগ করতে সাহস পান না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে অর্ধশতাধিক স্পা অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। বেশিরভাগ স্পাতেই নেই প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বা কোনো সরকারি নিবন্ধন।
এক ব্যবসায়ী বলেন, এভাবে স্পার নামে অপরাধ চললে পর্যটকরা বিচ্ছিন্ন হবে। কক্সবাজারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, যেসব স্পায় দেহব্যবসা, মাদক বা ব্ল্যাকমেইলের প্রমাণ পাওয়া যাবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। গোপন নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে।
যদিও স্থানীয়দের দাবি, অভিযান শেষে প্রভাবশালী চক্র আবার কার্যক্রম শুরু করে দেয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত স্পা সেন্টার যৌনবাহিত রোগ ও মাদকের বিস্তার বাড়িয়ে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করছে।
এক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, এসব স্পা কেবল অপরাধের কেন্দ্র নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি।
অভিযান কবে? প্রশ্ন স্থানীয়দের : গোল্ডেন ও স্মার্ট থাইসহ একাধিক স্পা নিয়ে বারবার অভিযোগ ওঠার পরও কার্যকর ব্যবস্থা না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের প্রশ্ন “অভিযান হবে কবে? আর কতদিন অবাধে চলবে এসব অসামাজিক ব্যবসা?”
.png)