চিকিৎসক সংকটে বন্ধ:২৪ ঘণ্টার মাথায় চালু সদর হাসপাতালের আইসিইউ
বাবলু দে / আবদুল করিম : অর্থ সংকটে বন্ধ হওয়ার মাত্র একদিন পর কক্সবাজার
জেলা সদর হাসপাতালের আধুনিক ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) আবারও সচল হয়েছে।
বিনাবেতনে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসা চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকায় বুধবার
(৩০ জুলাই) বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত সিদ্ধান্তে
নতুন করে তিনজন চিকিৎসক পদায়নের পর বৃহস্পতিবার থেকে আবার চালু হয় গুরুত্বপূর্ণ এই
সেবা।
হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. কফিল উদ্দিন জানান, দীর্ঘ নয় মাস ধরে
বেতন ছাড়াই পাঁচ চিকিৎসক ও ছয়জন কর্মচারী আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পরিবার-পরিজন নিয়ে সংকটে পড়ায় তারা দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান, যার ফলে আইসিইউ
কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়া অনুসরণ
করে নতুন করে তিন চিকিৎসককে পদায়ন করে। এর মধ্যে দুজন ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন
এবং একজন আগামী সপ্তাহে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
আইসিইউ বন্ধ থাকাকালে বুধবার ও বৃহস্পতিবার কোনো রোগী ভর্তি করা হয়নি।
তবে বিভাগটি পুনরায় চালু হওয়ায় রোগীরা এখন থেকে পুনরায় আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিতে
পারছেন।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারি অনুমোদন অনুযায়ী এখানে ৩২৮টি
পদ থাকলেও বর্তমানে ৭৬টি পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের ইনডোরে গড়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে
৮০০ রোগী ভর্তি থাকেন। আর জরুরি বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন গড়ে ৫০০ থেকে ১
হাজার রোগী। অথচ সেখানে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে সেবা চালানো হচ্ছে, যেখানে
প্রয়োজন অন্তত ১২ জন।
২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ‘স্বাস্থ্য
ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএসপি)’ এর আওতায় দেশি-বিদেশি
একাধিক এনজিওর মাধ্যমে কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হচ্ছিল। এই প্রকল্পের আওতায় জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ,
সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি ও শিশু সুরক্ষা বিভাগ চালু হয় এবং ১৯৯ জন অতিরিক্ত জনবল
পদায়ন করা হয়েছিল।
তবে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুনে। পরবর্তীতে তিন মাস
মেয়াদ বাড়িয়ে তা সেপ্টেম্বরে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরও কিছু চিকিৎসক
বিনাবেতনে কাজ চালিয়ে গেলেও একপর্যায়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, ফলে একে
একে বন্ধ হয়ে পড়ে বিশেষায়িত বিভাগগুলো।
চলতি বছরের ৮ মে সিসিইউ বিভাগ চিকিৎসক সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংবাদ
প্রকাশ ও সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে দুজন চিকিৎসক পদায়ন করে ১৩ মে থেকে
তা পুনরায় চালু হয়।
আইসিইউ বিভাগের ক্ষেত্রেও একই সংকট দেখা দেয়। প্রকল্প না থাকায় গত
বুধবার বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরদিন নতুন চিকিৎসক যোগ দেওয়ায় তা পুনরায় চালু
করা সম্ভব হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার বন্ধ হওয়ার এই প্রবণতা জেলার
স্বাস্থ্যখাতের জন্য বড় ধাক্কা। প্রকল্প নির্ভর এসব বিভাগ টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি
পদক্ষেপ ও স্থায়ী নিয়োগই একমাত্র সমাধান।