জরুরী নম্বর সমূহ

জরুরী নম্বর সমূহ

৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার কলেজ ছাত্র, ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রধান খাইরুলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ



বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকা থেকে অপহৃত হ্নীলা মঈন উদ্দিন কলেজের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল হারুনর রশীদকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে উখিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম পালংখালী থেকে উদ্ধার করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় কুখ্যাত ইয়াবা সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান খাইরুল বশর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটে ৬ আগস্ট বিকেলের দিকে। কক্সবাজারের ব্যস্ততম পর্যটন এলাকা কলাতলীর হোটেল আলবার্ট ট্রসের সামনে থেকে আল হারুনকে অপহরণ করে একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। স্থানীয় সূত্র বলছে, অপহরণের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটে জোরপূর্বক যুক্ত করা এবং নির্দিষ্ট কাজে বাধ্য করা।

সন্ধ্যার পরপরই অপহৃত আল হারুনকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় উখিয়ার পালংখালীর নলবনিয়া গ্রামে। অপহরণকারীরা সারারাত তাকে নির্যাতন করে ও মোবাইলে পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরদিন ৭ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে, আল হারুনের চাচা নুরুল আমিন বাবুল অভিযোগ অনুযায়ী অপহরণকারীদের নেতা খাইরুল বশরের কাছে নগদ ৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করলে, তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে সেই সময় তার শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল বলে পরিবার জানায়।

অভিযোগকারীরা জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী খাইরুল বশরের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে একটি সুসংগঠিত ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেট সক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় যুবকদেরকে কৌশলে ইয়াবা পাচারে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা রাজি হয় না, তাদের ভয় দেখানো হয়, অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়।

উখিয়ার পালংখালীর নলবনিয়া এলাকার বাসিন্দা খাইরুল বশর, আবু তাহেরের পুত্র কফিল উদ্দিন, রশিদ সওদাগরের পুত্র মিজানুর রহমান, নুরুল বশরের পুত্র মো. রুবেল, আইয়ুব সালামের পুত্র নুরুল ইসলাম, আবু তাহের ও নুরুল বশর।

অপহৃত ছাত্রের চাচা নুরুল আমিন বাবুল বলেন, “আমার ভাতিজা মেধাবী ছাত্র। ওকে প্রথমে ‘চাকরির সুযোগ’, ‘ভালো ইনকামের প্রলোভন’ দিয়ে ডেকে নেওয়া হয়। পরে অপহরণ করে সারারাত মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা দিয়ে ছাড়াতে হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর চক্র এলাকায় বহু তরুণের জীবন ধ্বংস করছে।”

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও স্থানীয়রা বলছেন, পালংখালী এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে প্রশাসন অবগত থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, “খাইরুল ও তার দল বহুদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের আশ্রয়ে তারা একেক সময় যুবকদের ফাঁদে ফেলে পাচারে বাধ্য করে। অপহরণ এখন নতুন কৌশল।”

এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দেয়। এলাকাবাসী মনে করেন, যদি এখনই এই চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পুরো প্রজন্ম বিপথে চলে যাবে।

এই ঘটনার একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত প্রয়োজন। অপহরণ ও মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, এই ধরনের ঘটনা কেবল আরও বাড়বে।
Powered by Blogger.